Logoশরয়ী সমাধান
Cover image

প্রবন্ধ

ড্রপ শিপিং বিজনেসের শরয়ী হুকুম

উসামা রউফ

১১ জুন, ২০২৫

বিজনেসের ধরণঃ ড্রপ শিপিং বিজনেসের ধরন হল, যায়েদের একটি পন্যের প্রয়োজন, সে আমরের সাথে পন্যের দাম নির্ধারণ করে পন্য ক্রয় করল। অথচ আমরের হাতে উক্ত পন্যটি নেই। সে বকরের কাছ থেকে আরো কম মূল্যে পন্যটি ক্রয় করে যায়েদের ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বললো। বকর যায়েদের ঠিকানায় পন্যটি পৌঁছে দিল। এই হল ড্রপ শিপিং বিজনেসের ধরন। ড্রপ শিপিং বিজনেসের হুকুমঃ ইসলামী শরীয়ায় ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি হলঃ 'পন্য হস্তগত হওয়ার আগেই বিক্রি বৈধ নয়' হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে, عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنِ ابْتَاعَ طَعَامًا فَلاَ يَبِعْهُ حَتَّى يَسْتَوْفِيَهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ وَأَحْسِبُ كُلَّ شَىْءٍ مِثْلَهُ ‏.‏ ইবনু আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনো খাদ্য বস্তু ক্রয় করবে, সে হস্তগত হওয়ার পূর্বে তা বিক্রি করতে পারবে না। ইবনু আব্বাস রাদি. বলেন, আমি মনে করি সকল পন্যের ক্ষেত্রে এই একই হুকুম। (সহীহ মুসলিম ৩৬৯৪) আমরা উদাহরণে দেখেছি ড্রপ শিপিং বিজনেসের ক্ষেত্রে এই মূলনীতি ভঙ্গ হচ্ছে, পন্য হস্তগত হওয়ার পূর্বেই বিক্রি করা হচ্ছে, তাই শরীয়াহর আলোকে ড্রপ শিপিং বিজনেস বৈধ নয়। ড্রপ শিপিং বিজনেসের এর বৈধ সুরতঃ তবে উক্ত বিজনেসের কিছু বৈধ পদ্ধতি হতে পারে, আমরা তা উল্লেখ করছি। ক] ড্রপ শিপিং বিজনেসের পদ্ধতি বর্ণনানুসারে, গ্রাহক যায়েদ আমরের সাথে পন্যের একটি বিক্রয় চুক্তি করবে, ক্রয় বিক্র চূড়ান্ত করবে না; বরং অ্যাগ্রিমেন্ট টু সেল বা ক্রয় বিক্রয়ের প্রতিশ্রুতি নিবে মাত্র। তারপর আমর বকর থেকে পন্য ক্রয় করে নিজে হস্তগত করতে না পারলে অন্য কাউকে হস্তগত করার উকিল বানাবে। এরপর নির্ধারিত মূল্যে যায়েদের কাছে বিক্রয় করবে এবং উকিলের মাধ্যমে সেল করে দিবে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষনীয়ঃ উক্ত পদ্ধতিতে মালিকানা ক্রেতা তথা যায়েদের নিকট হস্তান্তর হবে না। মালের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে তা ক্রেতা যায়েদের নিকট বর্তাবে না; বরং দায়ভার আমরের হবে। ক্রয়বিক্রয়ের চুক্তির পর যদি পন্য অন্য কারো নিকট বিক্রি করে দেয় তাহলে বিক্রয় শুদ্ধ হবে তবে তা নৈতিকতা বিরুদ্ধ হবে। উপরোক্ত কারণগুলো এ জন্য যে, বিক্রয়ের চুক্তি হয়েছে কেবল, পরিপূর্ণ সংঘটিত হয়নি। খ] আরেকটি পদ্ধতি হল, মূল বিক্রেতা তথা উদাহরণ অনুসারে বকর, দ্বিতীয় বিক্রেতা বা মাধ্যম আমরকে নিজের এজেন্ট নিয়োগ দিবে এভাবে যে, অমুক পন্যটি তুমি যায়েদের কাছে বিক্রি করে দাও, যার মূল্য থেকে নির্ধারিত পার্সেন্ট বা নির্ধারিত টাকা পারিশ্রমিক হিসাবে পাবে। উক্ত পদ্ধতিতেও কিছু বিষয় লক্ষনীয়ঃ মাধ্যম এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ থাকবে, মূল বিক্রেতা হিসাবে নয়। পন্যের অতিরিক্ত মূল্য পারিশ্রমিক হিসাবে গ্রহণ করবে। পারিশ্রমিক অনির্দিষ্ট বা অস্পষ্ট থাকতে পারবে না, নির্দিষ্ট হতে হবে। সুতরাং উল্লিখিত দুই পদ্ধতিতে ড্রপ শিপিং বিজনেস করলে তা শরীয়াহর আলোকে বৈধ হবে, অন্যথায় নয়। তথ্যসূত্র: عن حكيم بن حزام قال : أتيت رسول الله صلی الله عليه وسلم فقلت : يأتيني الرجل يسألني من البيع ما ليس عندي أبتاع له من السوق ثم أبيعه ؟ قال : لا تبع ما ليس عندك (سنن الترمذى، رقم-1232) فنقول من حکم المبيع اذا کان منقولا ان لايجوز بيعه قبل القبض….واما اذا تصرف فيه مع بائعه فان باعه منه لم يجز بيعه اصلا قبل القبض (الفتاوى الهندية-3/13) وشرطها : کون الأجرۃ والمنفعة معلومتين، لأن جهالتهما تفضي إلی المنازعة (رد المحتار، دار الفكر-5/6، كتاب الاجارة)
বিস্তারিত পড়ুন

লুডু, পাশা, দাবা খেলার শরয়ী বিধান

উসামা রউফ

১১ জুন, ২০২৫

পাশা, দাবা, লুডু ইত্যাদি গুটি বা কার্ড জাতীয় বস্তু দিয়ে খেলা হয়। গুটি বা এজাতীয় বস্তু দ্বারা অনুমান নির্ভর খেলাকে হাদীসের পরিভাষায় 'নারদাশীর' বা 'শতরঞ্জ' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর 'শতরঞ্জ' 'নারদাশীর' বা পাশাজাতীয় সকল খেলা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম। এ সম্পর্কিত কিছু হাদীসঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِي لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ যে ব্যক্তি 'নারদাশীর' খেলায় অংশগ্রহণ করল, সে নিজের হস্ত শূকরের রক্তে রঞ্জিত করল। (মুসলিম ২২৬০; আবূ দাউদ ৪৯৩৯) অপর হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَرَسُولَهُ যে ব্যক্তি 'নারদাশীর' খেলায় অংশগ্রহণ করল, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করল। (আবু দাউদ ৪৯৩৮) এক বর্ণনায় এসেছে, عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ مَرَّ عَلَى قَوْمٍ يَلْعَبُونَ الشِّطْرَنْجَ فَقَالَ: مَا هَذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ؟ لَأَنْ يَمَسَّ جَمْرًا حَتَّى يُطْفَأَ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمَسَّهَا. হযরত আলী রা. একবার দাবা খেলায় লিপ্ত কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদের কে বললেন, এই মুর্তিগুলো কী, যাদের সামনে তোমরা বসে আছো ? এগুলো স্পর্শ করার চেয়ে জলন্ত অঙ্গার নির্বাপিত হওয়া পর্যন্ত তা হাতে রেখে দেওয়া ভাল। (সুনানে কুবরা, বাইহাকী ১০/২১২) ( সায়্যিদুনা আলী রাদি. এর উক্ত আছারে দাবা সম্পর্কে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা এসেছে, দাবা গুটিতে রাজা, ঘোড়া ইত্যাদি গুটিগুলো মূর্তির মতই আকৃতি থাকে, যা ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক সুস্পষ্ট হারাম) অভিধানবেত্তাগণ 'নারদাশীর' এর অর্থ করতে গিয়ে বলেন, নারদাশীর বলতে সে সকল খেলাকে বুঝায় যাতে কাঠ, হাড় বা প্লাস্টিকের তৈরী বাক্স কিংবা চৌকো রয়েছে। যেমন পাশা, লুডু, দাবা, শতরঞ্জ ইত্যাদি, যা মূলত ভাগ্য ও অনুমাননির্ভর। (লিসানুল ‘আরাব ৩/৪২১; আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব ২/৯১২) ফুকাহায়ে কেরামের অভিমতঃ ইমাম বুরহানুদ্দীন মারগিনানী রহি. বলেন, কেউ কেউ বলে থাকেন, দাবা পাশা খেলা মুবাহ (অর্থাৎ হারাম নয়) কেননা তা অনুভূতি শক্তি বাড়ায়, বুঝ শক্তি শানিত করে। এমন একটি বর্ণনা ইমাম শাফেয়ী থেকে রয়েছে। আমরা বলব রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের ভিত্তিতে, ‘যে 'নারদাশীর' খেলায় অংশগ্রহণ করল সে নিজের হাত শূকরের রক্তে রঞ্জিত করল’ তাই এটি এমন খেলার অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ তায়ালা থেকে বিমুখ করে রাখে। সুতরাং তা হারাম হবে। (হিদায়া ৪/৪৭৮) ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহি. বলেন, والنرد حرام عند الأئمة الأربعة سواء كان بعوض أو غير عوض চার মাযহাবের ইমামদের দৃষ্টিতে 'নারদ' (লুডু, দাবা, পাশা) খেলা হারাম, চাই তাতে বাজী ধরা হোক বা না হোক। (মাজমুউল ফাতাওয়া ৩২/২৪৪) ইমাম আশরাফ আলী থানবী রহি. বলেন, দাবা খেলায় (বাজী থাকুক বা না থাকুক) আমাদের (আহনাফের) নিকট তা হারাম... আর তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীসের ভিত্তিতে, ‘যে ব্যক্তি 'নারদাশীর' খেলায় অংশগ্রহণ করল, সে নিজের হাত শূকরের রক্তে রঞ্জিত করল।’ (ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৪০) কোনো জিনিস উপকারী হলেই বৈধ হয় না কেউ কেউ দাবি করেন, দাবা খেলা যেহেতু উপকারী তাই তা বৈধ হওয়া উচিত। তাদের এই কথার জবাব ইমাম বুরহানুদ্দীন মারগিনানী রহি. দিয়েছেন, (যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে) তাছাড়া কোনো কিছু উপকারী হলেই তা বৈধ হয়ে যায় না। বৈধ হতে হলে শরীয়াহর মূলনীতিতে উত্তীর্ণ হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা মদ হারাম করতে গিয়ে 'মদের মধ্যে কিছু উপকারিতা আছে' বলে উল্লেখ করেছেন, তবে মদের মধ্যে যেমন উপকারের চেয়ে ক্ষতির দিকটাই বেশি, ঠিক তেমনিভাবে দাবা বা এজাতীয় খেলায় কিছুটা মাথা খাটানো প্রয়োজন পড়লেও অনেক কারণে এটি শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। তাই কিছু উপকার থাকলেই তা বৈধ হবার দলীল নয়। এজাতীয় খেলা হারাম হওয়ার কারণ, প্রথমত নুসুসের আলোকে যা নিষিদ্ধ হবে, তা কোনো প্রশ্ন বা যুক্তি না খুঁজে নির্দ্বিধায় মেনে নেয়াই মুমিনের পরিচয়। ক] ইসলামি শরীয়াহর একটি নীতি হল, সময় অপচয়কারী কোনো বিষয় ইসলামে অনুমোদিত নয়। দাবা এমন একটি খেলা, যার পিছে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করতে বাধ্য করবে। খ] দাবা লুডু ইত্যাদি খেলা গুলোতে জুয়ার আশংকা থাকে। (মোবাইল বা কম্পিউটারে পয়েন্ট পাওয়া যায়) যা শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ। গ] দাবা বা শতরঞ্জের গুটিগুলো মূর্তি সদৃশ। এটাও ইসলামি শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ। সুতরাং দাবা, পাশা, তাশ ও লুডু বা এজাতীয় খেলা শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ নয়। চাই তা কম্পিউটার বা মোবাইলে খেলা হোক অথবা বাস্তবে খেলা হোক। এ সমস্ত খেলা থেকে বিরত থাকা মুমিনের জন্য অপরিহার্য।
বিস্তারিত পড়ুন

সকল প্রসঙ্গ

২৭তম রজনী
অনলাইন কোর্স
অলিম্পিক
আংটি
আধুনিক মাসআলা
আধুনিক মাসাআলা
আমল
উম্মুল মু'মিনিন
ঋণ
ওকালতি
কট
কাপড়ের মোজা
কাফফারা
কাযা
কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস
কুফর
কুরবানী
ক্রিকেট
ক্রিপ্টোকারেন্সি
ক্র্যাকড
খেলাধুলা
খেলাধুলা হতে উপার্জন
গোশত বন্টনে
জমি
জর্দা
ডাক্তারি বিদ্যা
ডিফেন্স ফোর্স
ড্রপ শিপিং
তাকবীরে তাহরিমা
তামাক
তারাবীহ
তালাক
দাবা
দৈনন্দিন আমল
দোআ
দোয়া
নবীজি
নবুয়তের সিলমোহর
নামাজ
নেশা
নৌবাহিনী
পাইরেটেড
পার্লামেন্ট সদস্য
পাশা
পুলিশ
পেইড কোর্স
প্রয়োজনীয়
ফরেক্স ট্রেডিং
ফিদিয়া
ফুটবল
বন্ধক
বর্গা
বাইনারি ট্রেডিং
বিচারপতি
বিটকয়েন
বিড়ি
বিডিআর
ব্যবসায়
ব্যাডমিন্টন
ব্যারিস্টার
মদ
মাকরুহ
মাসবুক
মাসেহ
মুনাজাত
মেডিকেল
মোজা
যাকাত
যাকাত-ফিতরা
রাজনীতি
রাস্তায় পাওয়া জিনিস
রুকু
রোজা
রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজার মাসআলা
রোজার মাসাআলা
রোযা ভঙ্গের কারণ
র‍্যাব
লাইলাতুল ক্বদর
লাইলাতুল বারাআত
লুডু
শতরঞ্জ
শবে ক্বদর
শবে বরাত
শিক্ষক
সফটওয়্যার
সংবিধান
সরকারি চাকরি
সহশিক্ষা
সাধারণ সরকারি চাকরি
সামরিক বাহিনী
সামাজিক প্রথা
সালাম
সিগারেট
সিজদা
সুদ
সেক্যুলারিজম
সেনাবাহিনী
স্ত্রী
হারাম

© ২০২৫ শরয়ী সমাধান - সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Facebook Group